সংঘর্ষ বা সংঘাত বলতে অতি অল্পসময়ের জন্য বৃহৎ কোন বল ক্রিয়া করে বস্তুর গতির হঠাৎ ও ব্যাপক পরিবর্তন করাকে বোঝায়। ক্রিকেট ব্যাট দিয়ে বলকে আঘাত করা, ক্যারামের স্ট্রাইকার দিয়ে গুটিকে আঘাত করা, কামান থেকে গোলা নিক্ষেপ, ইত্যাদি এর অন্তর্গত।
মনে করি, একটি সমতলে m1 এবং m2 ভর u1 এবংu2 বেগে সরলরেখায় যাচ্ছে। তাদের বেগের ভিন্নতার কারণে ধরা যাক তাদের মাঝে সংঘর্ষ হলো এবং সে কারণে তাদের বেগ পাল্টে গেল, m1 ভরটির বেগ এখন v1 এবং m2 ভরটির বেগ v2। আমরা কি সংঘর্ষের পর বেগ v1 এবং v2 কত, সেটা বের করতে পারব?
সংঘর্ষের আগে ভর দুটির সম্মিলিত ভরবেগ m1u1+m2u2
সংঘর্ষের পর ভর দুটির সম্মিলিত ভরবেগ m1v1+m2v2
যেহেতু বাইরে থেকে কোনো বল দেওয়া হয়নি তাই সংঘর্ষের আগে যেটুকু ভরবেগ ছিল সংঘর্ষের পরেও সেটুকু ভরবেগ থাকবে। এটা হচ্ছে ভরবেগের সংরক্ষণশীলতা বা নিত্যতা।
কাজেই আমরা লিখতে পারি
m1u1+m2u2=m1v1+m2v2
এখানে একটি মাত্র সমীকরণ এবং দুটো অজানা রাশি v1 এবং v2, কাজেই আমরা v1এবং v2 বের করতে পারব না। যদি v1 এবং v2 বের করতে চাই তাহলে আরেকটা সমীকরণ দরকার, সৌভাগ্যক্রমে আমাদের আরো একটি সমীকরণ আছে। পরের অধ্যায়ে আমরা যখন শক্তি সম্পর্কে জানব তখন শক্তির নিত্যতার সূত্র থেকে দ্বিতীয় শক্তির সংরক্ষণশীলতার সূত্র থেকে আরেকটি সমীকরণ পেয়ে যাব, সেটি হচ্ছে শক্তির সংরক্ষণশীলতার সূত্র । তোমরা পরের অধ্যায়ে দেখবে m ভরের কোনো বস্তু যদি বেগে যায় তাহলে তার গতি শক্তি 12mu2 । কাজেই আমরা শন্তির সংরক্ষণশীলতা ব্যবহার করে লিখতে পারি:
12m1u12+12m2u22=12m1v12+12m2v22
সূত্র দুটোর দিকে তাকিয়েই তুমি বলতে পারবে দুটোর ভর যদি সমান হয়, অর্থাৎ m1=m2 তাহলেv1=u2 এবং v2=u1 অর্থাৎ বস্তু দুটো একটি অন্যটির সাথে তাদের বেগ পাল্টে নেয়।
দুটি বস্তুর সংঘর্ষের পর তাদের বেগ কত হয় সেটি ব্যবহার করে আমরা সরক দুঘটনার বিষয়গুলো খুব সহজে ব্যাখ্যা করতে পারবো
আমরা পরের অধ্যায়ে শক্তি সম্পর্কে জানার সময় পতিশক্তির বিষয়টি বিস্তারিতভাবে বুঝতে পারব কিন্তু “সংঘর্ষ” পড়ার সময় এর মাঝে জেনে গেছি যে গতিশক্তিকে 12mu2 হিসেবে প্রকাশ করতে হয়। ভ্রমণ সম্পর্কে আলোচনা করার জন্য বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শক্তির মাঝে বেগের বর্গ রয়েছে, যার অর্থ বেগ দ্বিগুণ করা হলে শক্তি চার গুণ বেড়ে যায়। যখন দুটো গাড়ির মাঝে সংঘর্ষ হয় তখন এই শক্তিটির কারণেই গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং আরোহীরা আঘাত পায়। কাজেই দুর্ঘটনার সময় ক্ষতি কমানোর সবচেয়ে সহজ উপায় হচ্ছে গতি কম রাখা। আমাদের দেশের বেশিরভাগ দুর্ঘটনা হয় গাড়ির বেগ বেশি রাখার কারণে। তখন গাড়িকে নিয়ন্ত্রণ করাও কঠিন হয় এবং দুর্ঘটনা ঘটার সময় সেখানে অনেক শক্তি ব্যয় হয়।
ধরা যাক পথে একটি অনেক ভারী পাথর বোঝাই ট্রাকের (m1) সাথে একই বেগে আসা ছোট একটা গাড়ির (m2) মুখোমুখি সংঘর্ষ হন। কে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে?
যেহেতু মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়েছে তাই ছোট গাড়ির বেল ট্রাকের বেগের বিপরীত।
অর্থাৎ ট্রাকের বেগ হলে গাড়ির বেগ – u
যেহেতু ছোট গাড়ির ভর m2 ট্রাকের ভর m1 এর তুলনায় অনেক কম সেটাকে শূন্য ধরে নিলে খুব বেশি ভুল হবে না কিন্তু আমাদের হিসাবটি খুব সহজ হবে। (তুমি ইচ্ছা করলে সত্যিকারের বাস-ট্রাক এবং ছোট গাড়ির ভর নিয়ে হিসাবটি করে দেখতে পারো) 12 কে শূন্য ধরে আমরা দেখি সংঘর্ষের পর ট্রাকের বেগ
v1=(m1-0)+2×0×(-u)m1+0=u
v2=(0-m1)(-u)+2m1um1+m2=3u
ফলাফলটি খুবই ভীতিজনক। সংঘর্ষের পর ট্রাকটি একই বেগে যেতে থাকবে, অর্থাৎ সংঘর্ষের ভয়াবহতা অনুভব করবে না। ছোট গাড়িটির বেগ –u থেকে পরিবর্তিত হয়ে 3u হয়ে যাবে যার অর্থ বেগের পরিবর্তন 3u - (-u) = 4u , ছোট গাড়ির বেগের দিক পরিবর্তিত হয়ে উল্টোদিকে চার গুণ বেগে ছিটকে যাবে। এই প্রক্রিয়ার ছোট গাড়িটি দুমড়েমুচড়ে ধ্বংস হয়ে যাবে এবং আরোহীদের প্রাণ হারানো হবে খুবই স্বাভাবিক ঘটনা।
কাজেই আমাদের পথে ভারী ট্রাক এবং ভারী বাস খুব সতর্ক হয়ে চালাতে হবে, কারণ দুর্ঘটনায় তারা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত না হলেও তাদের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষ হলে ছোট গাড়ি অনেক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
Read more